Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the insert-headers-and-footers domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
সুলেখা আক্তার শান্তার ছোটগল্প ” সুপ্ত যন্ত্রণা “ – Pratidin Sangbad

সুলেখা আক্তার শান্তার ছোটগল্প ” সুপ্ত যন্ত্রণা “

ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে ওঠে ভাবনা। আকাশ তুমি কোথায়? আকাশ তুমি কোথায়? বুক ধরফর করে চোখে অন্ধকার দেখি। তোমাকে ছাড়া জীবন যেন মৃত্যুর সমান কিন্তু মরণ কেন হয় না আমার। তোমাকে হারানোর বেদনা সুতীব্র যন্ত্রণা হয়ে গ্রাস করে আমার সমস্ত অস্তিত্ব। আমি আর সইতে পারি না। শত চেষ্টাতেও ভুলতে পারিনা তোমাকে। তুমি তো ঘর সংসার পরিবার নিয়ে ব্যস্ত। তোমাকে আর ফিরে পাবো না জানি। তোমাকে ছেড়ে আমি একা অনন্ত শূন্যতায়। আকাশ, আকাশ চিৎকার প্রতিধ্বনিত হয়। আবিদা এগিয়ে আসে। মা রে তুই এমন করিস না। চোখের সামনে সন্তান এমন করলে মায়ের বুক ফেটে যায়। মানুষের জীবনে ভালোবাসা আসে যায়। সংসার হলেও ভাঙ্গা গড়া আছে। তারপরেও মানুষের জীবন থমকে থাকে না। সব ভুলে মানুষ নতুন করে জীবন সাজাতে চেষ্টা করে। তুই আর পারলি না। ভাবনার বুক ফেটে যায়। বেইমানরা সবকিছু পারে। একজন ভালোবেসে মরে শূন্যতায়। আরেকজন সংসার পেতে দিব্যি চালায় জীবন। মেয়েকে নিয়ে দারুণ দুশ্চিন্তায় আবিদা। মেয়ের মানসিক চিকিৎসা করান তিনি। কিন্তু তাতে কাজ হয় না। ভাবনার একই কথা কোন ডাক্তার আমার কিছু করতে পারবে না। আমার জীবনের জন্য শুধু দরকার ছিল আকাশকেই। মাঝে মাঝে বিতৃষ্ণা জাগে জীবনের প্রতি। কোন শান্তনা ভাবনাকে শান্ত করতে পারে না। আকাশের টুকরো স্মৃতিগুলো ভেসে ওঠে মনের পর্দায়। আকাশের দেওয়া গিফট গুলো দিনের মধ্যে অনেকবার নেড়েচেড়ে দেখে।‌ আকাশ কেন তুমি আমার সঙ্গে এমন করলে? তোমার দেওয়া ওয়াদা কেন তুমি রাখতে পারলে না।
ভাবনার মা ভাবলেন মেয়ের বিয়ে দিলে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। বিয়েতে ভাবনা রাজি না। আবিদা মেয়েকে বলেন, এভাবে কোন মানুষ একা জীবন কাটাতে পারে না। অনেক বুঝিয়ে আবিদা মেয়েকে বিয়েতে রাজি করেন। রাকিবের সঙ্গে বিয়ে হয় ভাবনার। রাকিব এ যুগের ছেলে। সংস্কার মুক্ত মানসিকতা তার। সে বিষয়টি বুঝতে পারে। ভাবনার প্রতি তার কোন রাগ অভিমান অভিযোগ নেই। সে বরং ভাবনাকে বুঝায়। অতীতকে নিয়ে বর্তমানকে থামিয়ে দিও না। তোমার জীবনে অতীতে যা ঘটে গেছে সেটা অতীতেই পড়ে থাক। এসো বর্তমানকে নিয়ে আমরা জীবন সাজাই। আমি তোমাকে প্রেসার দিচ্ছি না, আমি চাই তোমার চলার পথ মসৃণ হোক। ভাবনা ভেবে দেখে, তার স্বামী তার উপরে রাগ অভিমান না করে তাকে বুঝায়। সে ভেবে দেখে তার স্বামীর তো তার উপর অধিকার আছে। সে অধিকার থেকে কেন তাকে বঞ্চিত করবে। সে বিষয়টা মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ভাবনা এখন এক ছেলের জননী। সে স্বামী সন্তান নিয়ে সুখেই আছে। ভাবনা আর রাকিবের বোঝাপড়া খুব ভালো।
ভাবনার ছেলে লিওন স্কুলে পড়ে। মা ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আসে নিয়ে আসে। স্কুলে লিওনের সাথে বন্ধুত্ব হয় তুহিনের। লিওন আর তুহিন একসাথে বেঞ্চে বসে। দুই বন্ধু কোন কিছু খেলে একসঙ্গে খায়। তুহিন ভাবনাকে দেখলেই আন্টি আন্টি বলে জড়িয়ে ধরে। ভাবনা তুহিনকে ছেলের মতো আদর করে। ভাবনা ছেলের জন্য টিফিন নিয়ে গেলে আলাদা করে তুহিনের জন্য টিফিন নিয়ে যায়। ভাবনা তুহিন কে আদর করে বলে বাবা তোমাদের বন্ধুত্ব এভাবে অটুট থাক। তুহিনের মা লিওনকে আদর করে। ভাবনা আর এলিনার মাঝে ভালো সখ্যতা তৈরি হয়। এলিনা হঠাৎ একদিন ব্যস্ত থাকায় স্কুলে ছেলেকে নিতে আসতে পারে না। তার স্বামী স্কুলে আসে ছেলে তুহিনকে নিতে। স্কুল ছুটির পর তুহিন দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে। ভাবনা তুহিনের বাবার চেহারা দেখে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো চমকে উঠে! এ সে কাকে দেখলো! তুহিনের বাবা আকাশও চমকে যায়। ভাবনার যাকে দেখবে আশা করে নাই আজ তার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। আকাশ বলে, কেমন আছো? ভাবনা কোন উত্তর না দিয়ে দ্রুত চলে যায়। তুহিন আন্টি বলে ডাকতে থাকে। ভাবনা আর পিছন ফিরে তাকায় না। ছেলে লিওনের স্কুল বদল করে অন্য স্কুলে ভর্তি করায়। আকাশের সঙ্গে আর যেন দেখা না হয় তার। হৃদয়ের সুপ্ত যন্ত্রণা যেন তাকে আর ক্ষতবিক্ষত না করে। যার সঙ্গে হলো না বন্ধন। তার সঙ্গে দেখা হয়ে আর বাড়াতে চায় না যন্ত্রণা।